জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত থেকে সাত বছর পর জীবিত হলেন ‘সামাদ’

নাটোর অফিস ॥
গত সাত বছর ধরে জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত ছিলেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লক্ষণহাটি গ্রামের আব্দুস সামাদ। এই সাত বছর ভোটাধিকার প্রয়োগসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। সাত বছরে চারবার আবেদনের পর সম্প্রতি তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত থেকে জীবিত হলেন। শুক্রবার করোনার টিকার আবেদন (রেজিস্ট্রেশন) করতে পেরে সাত বছরের দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ভুক্তভোগী আব্দুস সামাদ। তিনি উপজেলার লক্ষণহাটি গ্রামের এলবাস আলী ও আয়েশা বেগম দম্পতির ছেলে।
আব্দুস সামাদ বলেন, গত ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে গেলে নির্বাচন কর্মকর্তা তাকে প্রয়োগ করতে দেননি। নির্বাচন কার্যালয়ের কাগজপত্রে তিনি মৃত বলে জানানো হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে চারবার স্থানীয় নির্বাচন অফিসে আবেদন করেও সমাধান পাননি। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি ভোট দিতে পারেননি। তাছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিলেন না। অবশেষে মাস দুয়েক আগে তিনি আবারও নতুনভাবে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করেন। চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর জানতে পারেন তিনি কাগজপত্রে মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন। সেকারণে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় করোনার টিকা গ্রহণের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। এস এম এস পেলে টিকা গ্রহন করতে যাবে বলে জানিয়েছেন আব্দুস সামাদ।
আব্দুস সামাদের ছেলে ফজলুর রহমান জানান, জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বাবা ১৯৭০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র পান। যার নাম্বার ছিলো ৬৯২০৯০৬৬৯১০৯০। ওই সময় থেকে প্রয়োজনীয় সব কাজে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারও করেছেন
বাগাতিপাড়া পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র-১) ইউসুফ আলী বলেন, আব্দুস সামাদ তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পর প্রথমে তিনি জীবিত হিসেবে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি কী করে মৃত হলেন তা বোধগম্য নয়। বিষয়টি জানার পর নির্বাচন অফিসে কাগজপত্র সংশোধন সুপারিশ করা হয়েছিল।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাগাতিপাড়া পৌরসভার লক্ষণহাটি মহল্লার আব্দুস সামাদের বিষয় নিয়ে উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং এ আলোচনা হয়। পরে প্রায় দুই মাস আগে আব্দুস সামাদের ‘মৃত’ সংশোধনের দরখাস্ত পেয়ে আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি। বর্তমানে তার পুর্বের নাম্বারের জাতীয় পরিচয়পত্র সচল হয়েছে।
এটি সংশোধন হতে সাত বছর সময় লাগলো কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
এদিকে জীবিত থেকেও প্রায় সাত বছর মৃত হিসেবে গণ্য হওয়ার যন্ত্রনা থেকে রেহায় পাওয়ায় খুশী হয়েছেন আব্দুস সামাদ। এখন থেকে রাষ্ট্রেরসক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন এমনটা ভাবতেই আনন্দ লাগছে বলে জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *