নাটোরে কোরবানীর পশুর ভালো দামে খুশী খামারীরা

এম কামাল মৃধা, নাটোরের বিভিন্ন হাট ঘুরে
ঈদুল আযহার বেশ কয়েকদিন বাকি থাকলেও, নাটোরের খামারিদের পরিবারে চলছে অানন্দের ছটা। কোরবানির পশু বিক্রি করে আশানুরূপ লাভ হওয়ায় তাদের পরিবারে যেন ঈদের আগেই শুরু হয়েছে ঈদ। দীর্ঘদিন কোরবানির পশু পালন করে তারা প্রত্যাশিত লাভ পাচ্ছেন। কোরবানির পশু বিক্রি করে তাঁদের লাভ হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা।

এদিকে জেলার চাহিদা মিটিয়ে নাটোরের খামারিরা প্রায় দেড় লাখ কোরবানির পশু অতিরিক্ত বিক্রি করতে পারবেন বলে দাবি করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তথ্যমতে, নাটোর জেলার তেবাড়িয়া হাটের বাইরে ও প্রতিটি উপজেলায় কোরবানি পশু বিক্রির জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ কোরবানির হাট। এসকল হাটে গত প্রায় ১০ দিন থেকে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু বিক্রি। ভারত সহ অন্যান্য দেশ থেকে কুরবানীর কোন পশু আমদানী না হওয়ায় স্থানীয় খামারিরা এবার পাচ্ছেন প্রত্যাশিত দাম। প্রতিটি গরু বিক্রি করে তারা লাভ পাচ্ছেন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। অপরদিকে প্রতিটি ছাগল বিক্রি করে তারা লাভ পাচ্ছেন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।

নাটোর সদর উপজেলার ভাটোদারা গ্রামের খামারি করিম জানান, সম্প্রতি তিনি তার একটি গরু বিক্রি করেছেন। প্রায় দেড় মাস আগে গরুটির দাম উঠেছিল মাত্র ৪৯ হাজার টাকা। লস হবে ভেবে তিনি গরুটি বিক্রি করেননি। গত দুই দিন আগে তিনি এই গরুটি বিক্রি করলেন ৬৮ হাজার টাকায়। গরুটি বিক্রি করে তার ১০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে বলে দাবি করেন। দিঘাপতিয়া বাজার এলাকার খামারি জাহাঙ্গীর দাবি করেন, গত তিনদিন আগে তিনি তার খামারের একটি গরু বিক্রি করেছেন ৮৪ হাজার টাকায়।গরুটি বিক্রি করে তার প্রায় ১১ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় বাজার এলাকার খামারি মুনছুর জানান, তিনি এ পর্যন্ত খামারের তিনটি গরু বিক্রি করেছেন। গড়ে তার লাভ হয়েছে প্রায় আট হাজার টাকা। কোরবানি পশুর এই দাম অব্যাহত থাকলে এবারে তাদের ঈদ প্রকৃত ঈদেই পরিণত হবে বলে দাবি করেন তিনি। এক্ষেত্রে ভারত সহ বিদেশি গরু আমদানি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ দাবি করেন মুনসুর।

বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে নাটোর পানি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ বেলাল হোসেন জানান, জেলার ১ লাখ ৩২ হাজার চাহিদার বিপরীতে খামারিরা পালন করেছে ৩ লাখ পাঁচ হাজার পাঁচশ পশু। এরমধ্যে ৮০ হাজার গরু এবং ছাগল ভেড়া, মহিষ সহ আরো পালন করা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার পশু। ফলে জেলার চাহিদা মেটানোর পরেও প্রায় দেড় লাখ পশু বাইরের কুরবানী দাতাদের কাছে বিক্রি করা যাবে। খামারিদের লাভের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সদর উপজেলার করোটা হাটে সর্বোচ্চ দামে গরু বিক্রি হয়েছে। ১২ থেকে ১৪ মন মাংস হবে এমন গরু বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়।

এক প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন দাবি করেন, বিদেশী গরুর প্রবেশ ঠেকাতে আর রোগমুক্ত কোরবানির পশু ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে প্রতিটি হাটে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন জানান, মোটাতাজাকরণ ঔষধের ব্যবহার ঠেকাতে গত প্রায় ৬-৭ মাস থেকে প্রতিটি খামারে নজরদারি রাখা হয়েছে। ফলে নাটোরে পালনকৃত গরু সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার উপাদানে প্রস্তুত বলে দাবি করেন তিনি।

পশু পালনে খামারিদের উৎসাহিত করা গেলে বাইরে থেকে গবাদী পশু আমদানীর প্রয়োজন কি প্রশ্ন তুলে বেলাল হোসেন দাবী করেন, দেশীয় খাবারে পালন করা কোরবানির পশুর মাংসের পুষ্টিগুন বেশী৷ আর ক্ষতিকর জীবানুমগক্ত।

সার্বিক বিবেচনায়, বিদেশি গরুর প্রবেশ আর যে কোন ঔষধ ব্যবহার ঠেকাতে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও দাবি করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *