নাটোরে খরায় লিচুর ফলন কম ও ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কিত চাষীরা

নাটোর অফিস॥
এবার খরা ও বৈরী আবহাওয়া সত্বেও নাটোরের লিচু গ্রাম খ্যাত নাজিরপুরের বাগানগুলোর গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা লাল লিচু। টসটসে লিচুর ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে টসটসে লিচু। তবে গত মৌসুমের তুলানায় লিচুর ফলন অনেক কম হওয়ার আশংকা করছেন চাষীরা। একই কারণে লিচুর আকার ও স্বাদের পরিবর্তন হয়েছে। কোন কোন বাগানে লিচু পাকা ও হলুদ রং ধারনের আগেই ফেটে যাচ্ছে । ফলে লিচুর বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান চাষী ও লিচু ব্যবসায়ীরা। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, খরার কারনে তাদের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা বাগানে সেচ এবং পানি ছিটিয়ে দেওয়ায় এবারও লিচুর ভাল ফলন হবে ।
আর ৪ দিন পর জেলা প্রশাসনের বেধে দেয়া লিচু আহরণের সময় শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে মধু মাস জ্যৈষ্ঠ। নাটোরের বাগানগুলোতে এরই মধ্যে রং বদলাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে জেলার ৫৭০টি লিচু বাগানে এখন রসালো লিচু শোভা পাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরীণ জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়ারা লিচুর বাগান দেখতে আসলেও করোনা মহামারির কারণে এবার তারা আসতে পারছেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লিচুর ফলনও কম হয়েছে। ক’দিন আগেও গুরুদাসপুর উপজেলার লিচু বাগানগুলোতে স্বর্ণালি মুকুল শোভা পাচ্ছিল। এখন তা দানা বেঁধে সবুজ গুটি থেকে হলুদ রং ধারণ করতে শুরু করেছে। মালিকদের পরিশ্রমে লিচু পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণ আকার ধারণ করছে। মধুমাসের ফল হিসেবে পরিচিত এখানকার মোজাফ্ফর ও বোম্বাই জাতের লিচু দেশ সেরা। এছাড়া চায়না থ্রি জাতের স্বল্প সংখ্যক লিচু বাগান রয়েছে। গুরুদাসপুর উপজেলার লিচু গ্রামখ্যাত নাজিরপুরে উৎপাদিত লিচুর হাট বসে উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর ও মামুদপুর এলাকায় । এখন থেকে প্রতিবছর এসব লিচু ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু অনাবৃষ্টি ও অতি খরার কারণে লিচু রোদের তাপে পুড়ে ঝরে পড়ছে। এ কারণে এ বছর লিচুর সরবরাহ কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। লোকসানের আশংকায় রয়েছেন লিচুর বাগান মালিকরা।
বেড়গঙ্গারামপুর লিচু আড়তদার মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর লিচুর ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক করে লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। কিন্তু এ বছর করোনা ও লকডাউনের কারনে ক্রেতারা আসতে পারছেননা। এছাড়া প্রখর রোদে পুড়ে লিচু ঝরে পড়ায় সরবরাহ অনেক কম হবে বলে তিনি শংকা প্রকাশ করেন। আগে প্রতি ট্রাকে গড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার লিচু থাকতো। এবার ট্রাকপ্রতি সর্বোচ্চ দেড়লাখ টাকার লিচু থাকতে পারে। সেই হিসেবে তিন সপ্তাহের এই মৌসুমী লিচুর বাজারে ২৫ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হবেনা। নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও লাভবান হওয়ার আশায় বুক বেঁধে লিচুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষীরা।
বেড়গঙ্গারামপুরের লিচু চাষী সেলিম মোল্লা বলেন, আমার বাগানে ৭০টি লিচু গাছ আছে। লিচু ঝরে পড়া রোধে পানির সেচ দিচ্ছি। কাটবিড়ালী ও বাদুড় তাড়াতে লিচুর গাছে জাল টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি লিচুর আকার ছোট হয়েছে। তাছাড়া শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও পশ্চিমা বদ বাতাসের কারণে গত মৌসুমের তুলানায় লিচুর ফলন অনেক কম হয়েছে। একই কারণে লিচুর আকার ও স্বাদের পরিবর্তন হয়েছে। লিচু পাকা ও হলুদ রং ধারনের আগেই ফেটে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর এলাকায় মোজাফফর জাতের আগাম লিচুর আবাদ হয়। ১০ মে থেকে এই লিচু সংগ্রহ শুরু হবে। জেলায় মুম্বাই, দেশি, মোজাফফর ও চায়না-থ্রি জাতের লিচুর চাষ হয়েছে বেশি। এরি মধ্যে পাকতে শুরু করেছে দেশিগুলো। সবুজ লিচু লালচে বরণ ধারণ করেছে। মৌমাছি গুনগুন করে এক লিচু থেকে আরেক লিচুতে বসছে। এ বছর ৫৭০টি ছোটবড় বাগান মিলে লিচু চাষীরা ৪১০ হেক্টোর জমিতে লিচু উৎপাদন করছেন। বর্তমানে লিচুর অবস্থা ভালো আছে। কিছুকিছু জায়গায় খরার কারণে সমস্যা হয়েছে। আমরা কৃষকদেরকে সেচ এবং পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি কৃষকরা লিচুর ভাল ফলন পাবেন এবং ভাল বাজারমূল্যও পাবেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *