নাটোরে হাটে পড়ে থাকে করলা, আসে না মহাজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়া, নাটোর॥
নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের খরসতি গ্রামে চাষ হয় বিপুল পরিমাণ করলা। গ্রামের শতকরা ৯৫ জন মানুষ করলা চাষ করে। প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই ক্ষেতের করলা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চাষিরা। ক্ষেত থেকে তোলা করলা ডালিতে ভর্তি করে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় স্থানীয় খরসতি ঈদগাহ মাঠে। তবে এখানেই থমকে যায় কৃষকের সকল চেষ্টা। উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের এই বাজারে আসার রাস্তা খানাখন্দে পরিপূর্ণ হওয়ায় আসতে চান না কোনো মহাজন। তাই গ্রামের করলা পড়ে থাকে হাটে। দিনশেষে দাম পায় না কৃষক। করোনা পরিস্থিতি আরও কমিয়ে দিয়েছে করলার বিক্রি।

চাষিদের দাবী, যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন ভালো ছিলো তখন এই হাট থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মণ করলা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন তারা। তখন বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা করলা কিনে নিজস্ব যানবাহনে নিয়ে যেতেন। বরাবরের মতো এখনও গ্রামটিতে করলার বাম্পার ফলন হলেও যোগাযোগ অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় উৎপাদিত করলার নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত চাষীরা।

উপজেলা কৃষি-সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে সিংড়ার ৭০ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু খরসতি গ্রামেই ২৫ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। করলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪০ মেট্টিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষিবিভাগ।

খরসতি গ্রামের করলা চাষীরা জানান, পরিচর্যা ও কীটনাশকসহ এক বিঘা জমির করলা আবাদে খরচ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করা যায়। কিন্তু যাতায়াতের রাস্তা ভালো না থাকায় প্রায় অর্ধেক দামে স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে করলা বিক্রি করতে হয়। পাইকাররা না কিনলে করলা ক্ষেতেই পঁচে নষ্ট হয়।

করলা চাষি বাবু সরদার বলেন, ‘গ্রামটি করলা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও যোগাযোগ ও বিপণন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। তাছাড়া করলা বিক্রির কোনো সুনির্দিষ্ট বাজার নেই ঈদগাহ ছাড়া। এতে নায্যমূল্য পাই না আমরা।’

করলা চাষী ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘শুধু রাস্তার কারণে আমরা করলার দাম পাই না। বাইরের থেকে দু-একজন মহাজন এলেও মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমে করলা বিক্রি করতে হয়। না দিলে আর বিক্রি হয় না করলা।’

নওগাঁর পাইকারী ব্যবসায়ী মজিবর রহমান বলেন, ”রাস্তা খারাপ তাই করলা নিতে বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ি আনতে হয়। মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হলেই আমাদের কষ্ট কমে যাবে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস জানান, সিংড়া উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার মাত্র ৩ কিলোমিটারের বেহাল দশার কারনে কৃষকরা ফসলের নায্যমূল্য পাচ্ছে না। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের তাগিদ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খরসতি গ্রামে করলার চাষ তুলনামূলক বাড়ছে প্রতি বছর। কৃষকরা যেনো তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল পায় সেই লক্ষ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *